Can't Preview The Image

কিভাবে আমি শিশু সংগঠক হলাম'

‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’ গঠন ও কিছু স্মৃতি

(প্রথম পর্ব)

১.
যে কোন কিছুর সৃষ্ঠির পেছনে ইতিহাস থাকে। সৃষ্ঠি এবং ইতিহাসএকটি আরেকটির পরিপূরক। মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা।আর সব কিছুর নেতৃত্বে ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক দর্শনকে কাজে লাগিয়ে একটি জাতিকে পরাধীনতার শিকল ছিড়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশ স্থাপন করেছেন। শুধু কি তাই? স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে যখন এগিয়ে যাচ্ছেন, তখনই দেশী বিদেশী চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট।
তখন কিশোর বয়স আমার। আমার শৈশব কেটেছে এক অজপাড়া গাঁয়ে।রাজনৈতিক সচেতনতা বলতে যা বোঝায় তা তখনো আসেনি আমার মধ্যে। তবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু মূল্যায়ন করার শক্তি, সবই ছিল আমার।দুপুরের দিকে জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ।বড়রা বলাবলি করছেন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে গতরাতে।গ্রামের মানুষজন পরষ্পরের সাথে ফিসফিস করে কথা বলছে। কানের সাথে রেডিও লাগিয়ে শুনছে ভয়েস অব আমেরিকা ও বিবিসির খবর। কিশোর বয়সের কারণে বড়দের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে না পারলেও পাশে থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি।সেদিন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার দুঃসংবাদ আমার কিশোর মনেকি পরিমান আঘাত করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।স্পষ্ট মনে আছে দুপুর বেলা মুখে খাবার দিতে পারিনি।কারো কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার মতো বয়সও হয়নি আমার। রাতে ঘুমাতে পারিনি কিছুতেই। এভাবে রাত যায় দিন আসে। সময় গড়িয়ে যায় আপন গতিতে। আস্তে আস্তে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এলো। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতা আছেই।স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পা দিলাম কলেজ ক্যাম্পাসে।ছোটকালে বড়ই দুরন্ত প্রকৃতির ছিলাম।স্কুল জীবনে লেখাপড়ায় ছাত্র হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থান ছিল আমার দখলে প্রতিটি পরীক্ষায়।খেলাধুলায়ও তাই।দৌড়, সাতার, রচনা প্রতিযোগিতা সব প্রতিযোগিতায় প্রচেষ্টা থাকতো সব সময় ভাল করার।বড়ই স্বপ্ন ছিল বাবা, মা ও আমার মুক্তিযোদ্ধা বড় ভাইয়ের আমি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবো।
২.
কিন্ত প্রাণী দেহের নাড়িভুড়ি আর কলকব্জার নাড়ানাড়ির চেয়ে, শব্দ ও বাক্যের গাথুনিতে, ছন্দের কারুকাজে কবিতা সাজাতে, আমি কবিতাকেই বড় বেশী ভালবেসে ফেলেছিলাম। স্কুল পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশায় সেই চিরচেনা জন্মস্থানের মায়া ছেড়ে আমাকে জায়গা করে নিতে হলো ইট পাথরের চট্টগ্রাম শহরে। ভর্তি হলাম চট্ট্গ্রাম এম ই এস কলেজে। জড়িয়ে পড়লাম ছাত্র রাজনীতিতে।কলেজ ক্যাম্পাসে ‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেবোনা’ এমন শ্লোগানে সেদিন আমার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের নেশায় পেয়ে বসে।ভাবতে লাগলাম কিভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেবো? কিভাবে তা সম্ভব? তারপর রাজনৈতিক সচেতনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ্কে ধারণ করে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হলাম।কলেজ নির্ব্াচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেই গ্রামের ছেলেটি হাজারো ছাত্রছাত্রীর প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হলো। মুক্তিযুদ্ধের পর এম ই এস কলেজের প্রথম ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। দুবছর বেশ দাপটের সাথে রাজনীতি করেছি।তারপর আসে রাজনীতিতে অশনি সংকেত।
৩.
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ্ জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল জারি করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর রাজনীতি করার সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়।ছাত্রনেতাদের মামলায় জড়িয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল নেয়া হলে চট্টগ্রামে থাকাটাই নিরাপদ মনে করিনি। তারপর ১৯৮২ সালের অক্টোবরে পাড়ি জমালাম তিলোত্তমা ঢাকা শহরে।ঢাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করার মধ্য দিয়ে আমার ছাত্ররাজনীতির পরিসমাপ্তি ঘটে।স্বল্প সময়ের আমার সফল রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাপঞ্জী দূর ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে রাখি। যে রাজনীতি আমাকে দিয়েছে অনেক কিছু। বলা যায় শিশু সংগঠন করার স্পৃহাও আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে পেয়েছি।আর ছাত্র রাজনীতি ও শিশু সংগঠন করার যোগ্যতা দিয়েছে আমার সাহিত্য চর্চা।যা সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে শুরু করে নব্বই দশক পর্য্ন্ত ধরে রেখেছিলাম।বলতে পারি আমার লেখালেখি আমাকে যোগ্যতার আসনে স্থান দিয়েছে।
কিন্তু নব্বই সালের ৩রা আগষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’ নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করে, তার পরিচর্যা করতে করতে আমার লেখালেখির ছন্দ হারিয়ে ফেলি। গণমুখী ও স্বৈরচার বিরোধী লেখায় আমি প্রশংসা কুড়াই।কিন্তু আমার হৃদয়ে ছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধু। ছড়া কবিতায় আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি আমার হৃদয় থেকে।সেই যে লেখা ছেড়েছি আর কোন লেখা হয়নি সেদিনকার মতো। অথচ একদিন কবিতাই ছিল আমার সব। দেশ সমাজ রাজনীতি নিয়ে ভাবনা ছিল আমার কবিতার বিষয়।স্বৈরাচারের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত জাতির মুক্তি আন্দোলনের কথা ছিল আমার কবিতায়। বঙ্গবন্ধু মুজিবের আদর্শের কথাই শুধু বলতো আমার কবিতা।আমার তৎকালিন সময়ের লেখক বন্ধুরা(বেশীরভাগ আমার বয়সে বড়) এখনো ভর্ৎ্সনা করে। কেন আমি লিখিনা? সেই সব বন্ধুদের আমি কিভাবে বলি, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা নামে আমার এই পরিবারের ঘানি টানতে টানতে কবিতার ছন্দই আমি হারিয়ে ফেলেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২৬ বছরের বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার নতুন প্রজন্মের আমার সহকর্মীরা জানেই না আমি কবিতা চর্চা করি।
৪.
স্বৈরাচার আন্দোলনের সময় আমার কবিতা ‘ক্যালেন্ডারের লাল তারিখ’ দিয়ে প্রকাশিত হয় একটি ব্যতিক্রমী ক্যালেন্ডার। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত এই ক্যালেন্ডার টিএসসিতে প্রথম কবিতা উৎসবে আগত শ্রোতাদের হাতে হাতে দেখে আমি অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। সেই থেকে আমার চিন্তা চেতনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বড় পরিসরে কিছু একটা করার নেশা পেয়ে বসে। ছাত্ররাজনীতিতে আমার ছন্দপতন ঘটার কারণ ছিল জেনারেল এরশাদ কর্তৃক সামরিক আইন জারি।পুরো আশির দশক জুড়ে আমার কোন না কোন লেখায় স্বৈরাচার এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে আমার কলম দাড়িয়েছে গণতন্ত্র মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে।১৯৯০ সালে আমার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘কামানের চিৎকার’এ বেশীরভাগ কবিতাই ছিল স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে লেখা।সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বৈরাচার এরশাহীর উদ্দেশ্যে লিখেছিলাম-
ফাঁসি গুলির হুমকি দেখাস এবং দিবি জেলে
ওসব আমি ভয় করিনা শেখ মুজিবের ছেলে।
আসল কথা বলবো আমি মানবো নাতো হার
করলে তুমি করতে পারো আমাকে গ্রেফ্তার।
সামরিকী রিমোট দিয়ে চালিয়েছিলি সেনারেল
তোকে আমি লাত্থি দেবো হারামজাদা জেনারেল।
যেভাবে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন শুরু হলো
——————————————–
শুরু হলো আমার ঢাকায় নতুন জীবনযুদ্ধ। ঢাকায় প্রথম এসে বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আমার সিনিয়র বড় ভাই মোখলেছুর রহমানের হোস্টেলে উঠি। তিনি তখন বুয়েটের ছাত্র। আহসান উল্লাহ হলে থাকতেন। খুব স্নেহ করতেন স্কুলে থাকা অবস্থায়। তিনি আমাকে যতদিন ইচ্ছে তাঁর সাথে থাকার কথা জানালেন। তখন আমি আনন্দে আত্মহারা। এই ঢাকা শহরে আত্মীয় বলতে কেউ নেই আমার। এই অবস্থায় মোখলেছ ভাইয়ের এই প্রস্তাব আমাকে ঢাকায় স্থায়ী হতে সাহসী করে তুলেছে।
প্রতিনিদিন সকাল হলেই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতাম। যেখানে ছড়া সাহিত্যের আসর বসতো সেখানেই আমার উপস্থিতি। বিশেষ করে অবজারভার হাউজে অবস্থিত কিশোর বাংলা ও নয়া পল্টনে খেলাঘরের সাহিত্য সভায়। ঢাকার সকল লেখকের সাথে এরি মধ্যে পরিচয় হলে গেলো। সখ্যতা গড়ে উঠলো ইতিমধ্যে লেখকদের সাথে। বিশেষ করে বাপী শাহরিয়ার, টিপু কিবরিয়া, সিকদার নাজমুল হক।
একদিন বাংলার বাণীতে দেখা করলাম আমার রাজনৈতিক গুরু জনাব ওবায়দুল কাদেরের সাথে। তিনি তখন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। বাংলার বাণীতে বসতেন।আমার ঢাকায় আগমনের উদ্দেশ্য জানার পর তিনি আমাকে শাপলা কুড়ির আসর এর দায়িত্ব নেবার কথা বলেন। আমার সায় পেয়ে তিনি আমাকে বাংলার বাণী সম্পাদক শেখ সেলিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শাপলা কুঁড়ির আসরের দায়িত্ব দেবার কথা জানালেন। সেলিম ভাই আমাকে বিমানদার সাথে দেখা করে সংগঠনের কার্য্ক্রম শুরু করার নির্দেশ দিলেন। বিমান দা তখন শাপলা কুঁড়ির আসরের পরিচালক।আমি আবার শাপলা কুড়িঁর আসরের কাজ করবো শুনে বিমানদা কি যে খুশী হয়েছে বলে বোঝাতে পারবোনা।চট্ট্গ্রাম থেকে আমি রীতিমত লিখতার শাপলা কুঁড়ির পাতায়। যে কারণে বিমানদার কাছে আমি অতি পরিচিত ছিলাম।
৫.
কয়েকদিন পর বাংলার বাণীর শাপলা কুড়ির পাতায় আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেবার কথা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিলেন- ‘আবার শাপলা কুড়িঁর আসরের কার্য্ক্রম শুরু হচ্ছে’। আমি নতুন পুরাতনদের সংগ্রহ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। যোগাযোগ করি প্রথমে পুরাতনদের সাথে।পুরাতন যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ওবায়েদ আনন্দ, মোহাম্মদ হাসান, বাতেন বাহার, দেলোয়ার বিন রশিদ, সৈয়দ শফিউল আজম হেলাল। পত্রিকায়বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সারা দেশে নতুন পুরাতন শাখা নিয়ে কাজ শুরু করি।
এর মধ্যে এক অজ্ঞাত কারণে বিমান দা শাপলা কুড়ির দায়িত্ব ছেড়ে দেন। দায়িত্বে আসেন ওয়াহিদুর রশিদ মুরাদ(প্রয়াত)। তিনি বাংলার বাণীর বার্তা সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু বিমানদার হঠাৎ শাপলা কুড়িঁর দায়িত্ব ছেড়ে দেবার কারণে আমি শাপলা কুড়িঁতে কাজ করা উৎসাহ হারিয়ে ফেলি।তবুও কাজ করতে থাকি। আসরের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলার বাণীর প্রধান বার্তা সম্পাদক ওয়াহিদুর রশিদ মুরাদ। ওয়াহিদুর রশিদ মুরাদ আমাকে কাছে পেয়ে তিনিও খুশী হলেন। তিনি শাপলা কুঁড়ির আসরকে আবার নতুন করে সাংগঠনিক রূপ দিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।
১৯৮৬ সালে শাপলা কুড়ির আসরের দীর্ঘ্ বিরতির পর সম্মেলন আয়োজন করা হলে কর্তৃপক্ষের কিছু বাধ্যবাদকতার কারণে সংগঠনেরগুরুত্বপূর্ণ্ দায়িত্ব পাইনি। আমি তখন অভিমান করে বাংলার বাণী ভবন থেকে সেই যে বের হয়েছি আর কখনো বাংলার বাণী ভবনে যাওয়া হয়নি। চোখের কোণায় জমে থাকা কষ্টের পানি মুছতে মুছতে ফকিরাপুল হোটেলে অবস্থানরত বন্ধু মানুর (মহিউদ্দিন মানু) কক্ষে প্রবেশ করলাম। আমার মুখ দেখে সে বুঝতে পারে কমিটি নিয়ে কোন সমস্যা হয়েছে।বিস্তারিত বলার পর সে সান্তনা দিয়ে বলল, চিন্তা করনা, আমরা একটি নতুন সংগঠন করবো।
কিছু দিন পর বিমানদার সাথে একটি নুতন সংগঠন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করি আমি। বিমানদা তখন বাংলাদেশ টাইমসে কাজ করতেন। বিমানদার সায় পেয়ে শাপলা কুড়ির সাথে মিল রেখে ‘শাপলা কলির আসর’ নাম দিয়ে আবার বিমানদার দারস্থ হলাম। বিমানদা এই নামে সংগঠন করার পক্ষে সায় দিলেননা। কিন্তু আমার যুব মনে যে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে তাতে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে কাজ করার কথা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছিনা।হতাশ হয়ে চলে আসলাম। ব্যবসায় মন দিলাম।
৬.
মানুর সাথে প্রতিনিয়ত আডডা হতো। কথা হতো। মাঝে মাঝে অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলতাম আমি একটি সংগঠন করবোই। একদিন মানুকে গল্প করতে করতে বললাম- মানু, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি সংগঠন করলে কেমন হয়। সে সায় দিল। মানুর সম্মতি পেয়ে আমি তখন সংগঠনের নাম নিয়ে ভাবা শুরু করলাম। ‘বঙ্গবন্ধু শিশু মঞ্চ” বলতেই মানু রাজী হলো এই নামে।কাদেরকে নিয়ে সংগঠন করবো তাই নিয়ে গবেষনার অন্ত নাই। সবই দুজনের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তখন আমি মানুকে বললাম শাপলা কুঁড়ির আসরের পুরানোদের নিয়ে শুরু করা যায়। দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু করলাম আমাদের কর্মযজ্ঞ।প্রথমে ওবায়েদ আনন্দের সাথে দেখা করতে মানুসহ চলে গেলাম তার বাসায়।পুরান ঢাকার ঘি পট্টি, ৯ রামকান্ত নন্দী লেনে বাসা আনন্দদার। তার কাছে বিষয়টি বলতেই এক বাক্যে রাজী হলেন।শাপলা কুড়ির আরেক সহকর্মী সৈয়দ শফিউল আজম হেলালকেও বিষয়টি জানানো হলো। ৪ জন বিমানদার বাসায় গিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হলো।
বিমানদা থাকেন নারায়নগঞ্জের মিশন পাড়ায়। এক ছুটির দিনে গুলিস্থান থেকে ৪জন বাসে চড়ে চলে গেলাম নারায়নগঞ্জ বিমানদার বাসায়। সাথে নিয়ে গেলাম মৌসুমী ফল লিচু ও তরমুজ। বিমানদা ছিলেন খুব অতিথি পরায়ন মানুষ।কত কিছু খাওয়ালেন।‘বঙ্গবন্ধু শিশু মঞ্চ’ নিয়ে দীর্ঘ্ আলোচনা হলো।আনন্দদা(ওবায়েদ আনন্দ)বললেন মঞ্চের পরিবর্তে ‘মেলা’ দিলে কেমন হয়। সবাই একবাক্যে সায় দিলাম। তারপর সিদ্ধান্ত হলো একটি শক্তিশালীউপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে।যে কমিটিতে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা থাকবেন। প্রস্তাবিত উপদেষ্টাদের নামের তালিকাও তৈরী করলাম। পরদিন বিমানদা আমাদের ৫ জনকে নিয়ে দৈনিক খবর গ্রুপের উপদেষ্টা এম আনিসুজ্জামানের কাছে গেলেন। দৈনিক খবরের অফিস ছিল ১৩৭, শান্তি নগর। তাঁর সাথে এ বিষয়ে আলোচনায় করতেই সবচেয়ে বেশী তিনি খুশী হলেন মনো হলো।তিনি তাঁর বাসায় পরদিন আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আমরা ৫ জন একত্রিত হলাম বাংলাদেশ টাইমস এ। সেখান থেকে এ্যালিফ্যান্ট রোডে এম আনিসুজ্জামানের বাসায়। সংগঠনের প্রস্তাবিত নাম “বঙ্গবন্ধু শিশু মেলা” শুনে তাঁরও পছন্দ হলো নামটি। তিনি বললেন ‘শিশু’র সাথে ‘কিশোর’শব্দটি সংযোজন কর। এবার সংগঠনের নাম দাড়ালো ‘বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা’।তিনি দিক নির্দেশনা দিলেন। বললেন এবার উপদেষ্টামন্ডলী করাই তোমাদের কাজ। তিনিও বেশ কজনের নাম দিলেন। আমরা প্রায় ৪০ জনের মতো একটা তালিকা তৈরী করলাম। উপদেষ্টা সংগ্রহের দায়িত্ব নিলাম আমি আর মহীউদ্দিন মানু। শুরু হলো জাতির পিতার নামে বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা। চলবে……..


ছবি পরিচিতি
১। এম ই এস কলেজের ছাত্রলীগের সহকর্মীদের সাথে আমি-১৯৮২
২। এইচ এস সি প্রথম বর্ষের ছবি-১৯৮০
৩। এইচ এস সি দ্বিতীয় বর্ষের ছবি-১৯৮১
৪। শাপলা কুঁড়ির আসরের ছোট্ট বন্ধুদের সাথে- ১৯৮৬
৫। আমার প্রথম প্রকাশিত ছড়াগন্থ ‘কামানের চিৎকার- ১৯৯০